আজ রাতে ছিল ইউরো কাপ এর কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ স্পেন ও জার্মানি র মধ্যে হওয়া এই ম্যাচ এ মেরিনোর শেষ মুহূর্ততে করা অসাধারণ হেডার করা গোল এর কারনে এ হারের সম্মুখীন হতে হয় জার্মানি কে। এই ইউরো কাপ ই ছিল ডাচ্ মিডফিল্ডার টনি ক্রুসের শেষ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, তাই জার্মানির বিদায় ক্রুজ এর ও বিদায়ঘণ্টা বেজে গেলো।
টনি ক্রুস নাম টা শুনলেই মাথায় আসে এক ৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট লম্বা, ফর্সা, সুঠাম দেহের এক ফুটবলারের কথা। যার দৃষ্টি সৃজনশীলতা, পাস প্রদান করার ক্ষমতা, দুর্দান্ত ফ্রি-কিক এবং কর্নার নেওয়ার দক্ষতা দিয়ে যেকোনো দল এর ডিফেন্ডার দের হাড়হিম করে দিতে পারেন ভাঙতে পারেন যেকোনো রক্ষণ এর জাল।
টনি ক্রুস এর জন্ম হয় এক ডাচ পরিবারে ১৯৯০ এর দশকে। ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি ছোট্ট টনির টান একটু বেশি। ক্রুস পরিচিতি পেয়েছে মূলত কেন্দ্রীয় মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসাবে। মাঝ মাঠ থেকে তাঁর তৈরী নিখুঁত সব পাস ও শৈল্পিকশর্তার, পায়ের জাদুর প্রেমে সব ফুটবল প্রেমীরায় পড়েছে। কতই না কঠিন পরিস্থিথিতিতে প্রিয় দল মাদ্রিদ কে বার করে এনেছেন দর্শক দের দিয়েছেন তৃপ্তি ও জয়ের স্বাদ। তার তৈরী লং বল সব বাঁধা ভেদ করে পৌঁছেছে বিপক্ষের গোল এ।
জার্মান ফুটবল ক্লাব গ্রাইফসভাল্ডারের যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে ক্রুস ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছেন । ২০০৭–০৮ মৌসুমে, জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ২-এর হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছেন, যেখানে তিনি ২ মৌসুম অতিবাহিত করেছেন; বায়ার্ন মিউনিখ ২-এর হয়ে তিনি ১৩ ম্যাচে ৪টি গোল করেছেন। একই মৌসুমে তিনি বায়ার্ন মিউনিখের মূল দলের হয়ে অভিষেক করেছেন, যেখানে তিনি ৬ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় ২০৫ ম্যাচে ২৫টি গোল করার পাশাপাশি ৩টি বুন্দেসলিগা শিরোপা এবং ১টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়লাভ করেছেন। মাঝে তিনি ২ মৌসুমের জন্য লোন এ বায়ার লেভারকুজেনের হয়ে খেলেছেন (২০০৯-২০১০)। ২০১৪–১৫ মৌসুমে, তিনি প্রায় ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বায়ার্ন মিউনিখ হতে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ জয়েন করেন। ২০১০ সালে জার্মানি র মূল দল এ অভিষেক হয় ক্রুসের ২০১০,২০১৪,২০১৮ ,২০২২এর ফিফা বিশ্ব কাপ এ অংশ গ্রহণ করেন ক্রুস যার মধ্যে বিশ্ব কাপ পর্বে তিনি ১৪টি ম্যাচে ৩টি গোল করেছেন। ও উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এও ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জার্মান দল এর মাঝ মাঠের অন্যতম কান্ডারী তিনিই। ২০১৪ বিশ্বকাপ এ মেসির আর্জেন্টিনা কে ফাইনাল এ হারিয়ে ইওয়াখিম ল্যোভের অধীনে বিজয়ী হয় ডাচ বাহিনীরা।
ব্যক্তিগত ও দলগত ভাবে জার্মান এই মিডফিল্ডার তার পুরো ক্যারিয়ার এ অর্জন করেছেন অসংখ্য সব শিরোপা । যা অর্জন করা একজন যেকোনো প্রফেশনাল ফুটবল এর স্বপ্ন ক্রুস তা সবই অর্জন করেছেন।
২০১৪ সালে বর্ষসেরা জার্মান খেলোয়াড়, এবং ২০১৮ সালে বর্ষসেরা জার্মান ফুটবল খেলোয়াড় হিসাবে মনোনীত হন। দলগতভাবে, ক্রুস এপর্যন্ত ২৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ৯টি বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে, ১৩টি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এবং ১টি জার্মানির হয়ে জয়লাভ করেছেন। সর্ব মোট ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সহ দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ও লা লিগা কোপা দেল রে এর মতো একাধিক শিরোপা তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার এ তিনি অর্জন করেছেন।
ক্রুস নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের এর ইতি টেনেছেন। এই ইউরো ছিল তাঁর লাস্ট আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। আজ স্পেন এর কাছে হারের পর ক্রুস নিজের দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ টি খেলে ফেলেছেন, হয়তো এই মহান খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ি জীবনটা র সমাপ্তি টা আরও সুন্দর ভাবে হতে পারত । এই বিদায় বেলায় টনি ক্রুস কে জানাই অসংখ্য সম্মান ও ভালোবাসা সমস্ত ফুটবল প্রেমীদের থেকে।